হ...ক...মা্‌..............ও...লা!!!



আমরা প্রতি নিয়তই তো কোন না কোনভাবে প্রতারিত হচ্ছি, আসুন আমরা আরো একবার মনে করে নেই কোথায়, কখন কিভাবে প্রতারণার কবলে পড়ি......

কারিফক্করঃ এরা বাংলাদেশের বিশেষ একটি জেলার কয়েকটি গ্রামে বিভক্ত হয়ে একদল কুখ্যাত প্রতারক বাস করে, মুলতঃ এরাই সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। এদেরকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় "কারিফক্কর"কারি শব্দের মুল অর্থ সঠিক ধারণা জানা যায়নি তবে সম্ভবত এর অর্থ বিশেষজ্ঞ আর "ফক্কর" শব্দটি হচ্ছে উপহাস ব্যঞ্জক ভাষা, যা ফকির শব্দের বিকৃতি রুপ,(এক ধরনের ধর্মীয় ভিক্ষুক বোঝায়)


মুলতঃ এ সম্প্রদায়ের লোকরা নিঃস্ব এবং ভূমিহীন ফকিরী পোষাক পরে গ্রামাঞ্চলে ঘুরে বেড়ায়, তারা সরলমনা ও মূর্খ গ্রামবাসীর অজ্ঞতা, ধর্মীয় কুসংস্কারের সুযোগ গ্রহণ করে এবং অবৈধ উপায়ে অর্থোপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কালের আবর্তনে নদীভাঙ্গন ও আয়ের পথটি ক্রমশ নিঃশেষিত হচ্ছে ফকিররা বাধ্য হয়ে বিভিন্ন শহরে আস্তানা গেড়েছে, এই সব প্রতারক তিন বা ততোধিক লোক নিয়ে দলে দলে বিভক্ত হয়ে জীবিকার জন্য বের হয়,দলের একজন ফকির এবং অন্যরা তার চেলা সাজে।


দলের একজন আগেই এমন ধনী পরিবারে খোঁজখবর নিয়ে আসে কোন মারাত্নক রোগব্যাধি কিংবা অন্য কোন সমস্যা আছে কিনা? অত্যন্ত অসহায় পরিবারের সকল সদস্যের সব তথ্য আগেই জেনে নেয় আর গড়গড় করে বলতে থাকে। ফকিরের তাছবীর সুতায় কিংবা হাতের ছোট গাছের ডালটিতে আগেই সামান্য স্যাকারিন মেশানো হয়। অতঃপর এক গ্লাস পানিতে সবার সামনেই তছবীহ ভিজানো পানি মিষ্টি হয়ে গেল? তাজ্জব ব্যাপার! সবাই এই অলৌকিক তিলিসমাতী দেখে মুগ্ধ।

পুর্বেই একটি পেন্সিলটর্চ কৌশলে ফকিরের জামার ভিতর লুকানো থাকে একটু চাপ পড়লেই তা জ্বলে উঠে। বাহ দেহ থেকে একটি জোতির্ময় ভাব আসছে। ফকির বাড়িতে আসার আগেই তার চেলা গভীর রাতে সাম্ভাব্য কোন স্থানে তাবীজ,মানুষের কিংবা জীবজন্তর মাথার খুলি বা হাড় পুঁতে রেখে আসে। ফকির বলতে থাকে, নিঁখুতভাবে ঐ জায়গার নির্দেশ করে এবং তার চেলারা এনে তা দেখায়। এভাবে ব্যক্তি বিশেষের বিস্বাস অর্জন করে ফকির তার নির্দেশাবলী মেনে চলার পরামর্শ দেয়, তখন বাড়ীর সদস্যরা সেই পরামর্শ সন্তষ্ট চিত্তে গ্রহন করে যাতে তার আসন্ন ক্ষতি, বিপদ/আপদ থেকে তারা রক্ষা পায়; এবার শুরু হল আসল খেইল।

মূল্যবান গহনা, টাকা পয়সার উপর কিছু তন্ত্রমন্ত্র পড়ে দিতে হবে। স্ত্রীলোকদের প্রতারনা করার সময় বলে সব গহনাপত্র পড়ে আসেন। রহস্যজনক মন্ত্রপাঠ করার পর বলে এবার একটা তাবীজ দিব। সেটা ধারণ করতে হবে পাক পবিত্র হয়ে। গোসল করে আসুন আর যাবার সময় এই মাটির হাড়িতে সব গহনা, টাকা রেখে যান, তা না হলে মন্ত্রের গুন নষ্ট হয়ে যাবে। তারপর হাড়ির সব জিনিষপত্র সরিয়ে ফেলে নতুবা আরেক হাড়ি এনে রেখে দেয়, যাবার সময় বলে যায় আগামী অমাবশ্যার রাতে হাড়ির মুখ খুলবে তার আগে মুখ খোলা হলে বিপদের সম্ভাবনা আছে, বলে ভয় দেখিয়ে চলে যায় বহু দুরে।



এই সমস্ত প্রতারকরা কেউ কেউ লম্বা চুল (বাবরী)রাখে তারা সাধারণতঃ লুঙ্গি পরে। তাদের পোষাকের একটি অংশ লাল শালুর তৈরী থাকে, তসবীর দানা হাতে রাখে, গভীর ধ্যানে মগ্ন এমন ভাব দেখায় এবং থেকে থেকে উচ্চঃস্বরে দুর্বোধ্য বাক্য আওড়ায় বিড়বিড় করে হ...ক...মা্‌..............ও...লা!!! বলে বিশ্রি শব্দ উচ্চারন করতে থাকে। ফকিরের সাথে যে চেলারা থাকে তারা খুব ভাল পোষাক পরিহিত, হাতে ঘড়ি, সোনার আংটি, পায়ে দামী জুতা ব্যবহার করে এবং তারা ফকিরের কম্বল, সুটকেস বহন করে থাকে; এমন ভাব দেখায়, যে ফকিরের কথাবার্তা যেন তাদের জন্য আইনস্বরুপ, তারা যেন শুধু ফকিরের ইচ্ছা ও প্রয়োজন পূরণের জন্যই বেঁচে আছে। এই প্রতারকদের কর্মস্থল সারা বাংলাদে। আজকাল তারা চলতি ট্রেন ও স্টীমারে অপরাধজনক কার্যকলাপ করে, এই সময় এরা নিম্নলিখিত সাংকেতিক শব্দগুলা ব্যবহার করে থাকেঃ

(১) ম্যানকারী..................শিকার
(২) নাগুরা........................টাকা
(৩) গুব্বা.....................শিকারের স্থান
(৪) বুড্ডা...........................পুলিশ
(৫) দান...........................সাফল্য
(৬) ম্যানপাট্টা...............কানাকড়িহীন শিকার
(৭) লখো........................শিকার ধর
(৮) তজো........................পালাও (ভাগো)

No comments:

Post a Comment